বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

নিশ্চুপ বিদায়



নিশ্চুপ বিদায়

খানিকটা বাংলা খানিকটা বিহারী আর খানিকটা হিন্দি ভাষা মেশানো চিৎকারটা শুনতে পাচ্ছি মোড়ের শেষমাথার বাড়িটার




সামনে থেকে। চিৎকারের চেয়ে আর্তনাদ বলাই ভাল।




কৌতুহলে বাড়িটার কাছাকাছি যেতেই দেখলাম প্রচুর লোক ভীড় জমিয়েছে সেখানে যেন সার্কাসে বানরের খেলা দেখানো




হচ্ছে।




পাগলিটা চেঁচাচ্ছে।




মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে পাগলিটা।




শব্দটা দোতলা অব্দি যাচ্ছে।




জানালার সামনে বসা মিসেস ফাতেমাই পাগলির লক্ষ্য। বাড়ীর মালকিন। রবিনের মা।




বিরক্তমুখে একবার রবিনের ঘরের দিকে তাকাচ্ছেন, একবার পাগলির দিকে। ঝামেলা যতসব!




উসকো-খুসকো চুল, একহারা চেহারা, উজ্জ্বল দুটো চোখ, রোদেপোড়া চামড়ার তলায় আসল রঙ বোঝায় এককালে




সুন্দরীই ছিল, গায়ে শতচ্ছিন্ন শাড়ি, ডানহাতে বহু পুরাতন বালা, চিৎকারের ভাষা প্রকাশ করে সে বিহারী।




পিতৃপ্রদত্ত নাম ললিতা, মাথা অনেক আগে থেকে খারাপ, এলাকায় আছে বহুদিন, একা একাই ঘুরে বেড়ায় সারাদিন।




কখনো এ বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়ে তো কোনদিন ও বাড়িতে গিয়ে খাবার খায়।




ভালবেসে বললে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, অথর্ব অনাত্মীয় দয়ার যোগ্য, ভালবাসা না।







ললিতারও একটা সংসার ছিল, বিহারী বস্তিতে ছোট্ট ঘরে অভাবে ভরা সুখের সংসার। হঠাত একদিন চোখের সামনে




সবাইকে আগুনে পুড়তে দেখল, শরীরের উপর একটা বিশালদেহী রোমশ শরীর উঠে আসতে দেখলো, মাবাপ তুলে




গালাগাল শুনল। ললিতার আর কিছু মনে নাই। রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা তখন থেকে শুরু। ললিতা নামটাও হয়ত হারিয়ে




যেত,




যদি না হঠাত এক আত্মীয় তাঁকে আবিষ্কার করে, কিছু খাবারের বদলে মধ্যরাতে তাঁকে নিয়ে নির্জনে চলে যেত।







গতকাল থেকে কোনমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে।




দারোয়ানের পা বেশ শক্ত, ভয়ানক একেকটা লাত্থি। পথের ভিখারীর এপার্টমেন্ট বাসার বেসমেন্টে ঘুমানোর স্বাদ জন্মের




মত মিটিয়ে দিয়েছে সে পিটিয়ে। লাঠির বাড়ি পড়েছে ডানপায়ের হাড্ডিতে, চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে, ললিতা কাঁদছে, চিৎকার




করে কাঁদছে। কিন্তু এই কান্না কে বুঝতে যাচ্ছে!




মিসেস ফাতেমার প্রেশার বাড়ছে। সহ্য অনেক করেছেন। আমজাদ সাহেব যদি ব্যাপারটা না দেখে, তিনি ঘর ছাড়বেন।




সন্ধ্যাবেলা, তার ৮ বছরের ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরেছে পাগলি। সাহস দেখো কত! এলাকার লোকজন এলোপাথাড়ি মারতে




থাকে পাগলিকে। শিল্পপতির ছেলের গায়ে হাত দেয়া সহজ কথা না।




ছেলেটা আগে তাঁর গায়ে লাঠি দিয়ে মারছিল, কিন্তু পাগলের কথা কে শুনতে যায়। মার থামলো না।




মিসেস ফাতেমা উপর থেকে মারতে মানা করছেন, অসস্তি বাড়ছে তাঁর। ছেলেটা অনেক দুরন্ত হয়েছে, নতুন কিনে আনা




হকিস্টিক নিয়ে কেন পাগলির উপরই ওর ডেমো দিতে হবে!




ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে উত্তর শুনে থমকে গেলেন, ‘যেদিন ওকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা মারলে, সেদিন তো বললে, মানুষ




না, ওতো পাগল! আমিও তো মানুষকে মারিনি, পাগলকে মেরেছি!’




দাঁত কিড়মিড় করছেন মিসেস ফাতেমা, তাঁর কাছে রাগ লাগে এই পাকাপাকা কথা, বাঙাল মায়েদের মত মধুর লাগেনা।




পেটেধরা হলে হয়ত লাগত।




৮ বছর আগের কথা।




মিসেস ফাতেমা আর আমজাদ সাহেব ছিলেন নিঃসন্তান দম্পতি, শিল্পপতি আমজাদ সাহেবের সম্পত্তির উত্তরাধিকারীর




অভাব তাকে দুশ্চিন্তায় পাগল করে ফেলেছিল।




আবার সন্তান না থাকার হাহাকার ফাতেমাকে প্রায় মানসিক রোগীর মত বানিয়ে দিচ্ছিল। পরিচিতদের আমজাদ সাহেব




নিজের সমস্যা বলেই চালিয়ে দিয়েছেন, ফাতেমাকে ভালবাসতেন। পরিবার থেকে দ্বিতীয় বিয়ের চাপের ঝামেলা নিতে




চাননা তিনি।




এক রাতের বেলা, বেশ দেরি করেই বাড়ি ফেরেন আমজাদ সাহেব।




ব্যক্তিগত সহকারীর কোলে কি যেন একটা।




একটা ফুটফুটে বাচ্চা!







কোন হারামজাদা কুকাজ করে দিয়েছিল, এলাকার পাগলিটা কনসিভ করে ফেলেছে, এখন এ বাচ্চাতো কুকুর বেড়ালে




খেতে দেয়া যায় না!




সমাজের অধঃপতনের উপর আধাঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে দিলেন,




তারপর স্ত্রীকে বোঝান যে, পাগলির কাছে থাকলে বাচ্চাটার অন্ধকার ভবিষ্যৎ হবে, আবার তাদের সন্তান দরকার, তাই




বাচ্চাটাকে দত্তক নিয়ে নেওয়াই ভাল। স্বামীভক্ত ফাতেমা অম্লানবদনে বাচ্চাটাকে কোলে নেন।




তারও তো মাতৃত্বের স্বাদ পেতে ইচ্ছে করে, যদিও তিনি বুঝেছেন, বাচ্চার বাবা আমজাদ সাহেবই।







রাত অনেক হয়ে গেছে। ললিতা মার খেয়ে নেতিয়ে পড়ে আছে। খাবার চেয়ে লাত্থি খেয়েছে আরেক চোট। রক্তে ভেসে




যাচ্ছে কাপড়। পাগলের ডাক্তার লাগেনা, নোংরা পাগলের কাছে কে আসবে?




আসে হয়তো কেউ কেউ, কামনা মেটাতে, হাতের ঝাল মেটাতে।







ডাস্টবিনের সামনে পড়ে থাকা পাগলির সামনে গুটিগুটি পায়ে এসে দাঁড়ালো রবিন, মা-বাবা ঘুমুতে যেতে দেরি না করলে




আরো আগেই লুকিয়ে বের হতে পারত। তার হাতে কিছু খাবার আর গামছা, তুলা,পানি, স্যাভলন। অনেক ব্লিডিং হতে




দেখছিল। আজ তার জন্য পাগলি বেচারি মার খেয়েছে। খারাপ লাগছে তার, চোখে পানি, কেন মানুষ এদের সাথে এমন




করে?







ললিতা চোখ বন্ধ করে মৃত্যুর অপেক্ষা করছিল, হঠাৎ কোমল হাতের স্পর্শ তাকে জাগিয়ে তুলল। হ্যা এসেছে, ছেলেটা




এসেছে! এই ছেলেটাই সন্ধ্যায় কি মার মেরেছে, মমতার জোর সব ভুলিয়ে দিচ্ছে।




এত আপন লাগে কেন ছেলেটাকে? যেন নিজের রক্তে গড়া!




এই ছেলেটার চোখে পানি! কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শ করল ছেলেটাকে।







অনেক আনন্দ হতে লাগল মনে, চোখে স্নেহ নিয়ে ছেলেটাকে চলে যেতে দেখল। জীবনে তার যা পাওয়ার হয়ে গেছে।




মাথাটা ফাকা লাগছে ললিতার, চোখ বুঝল শান্তি নিয়ে।




আর কাউকে কোনদিন জ্বালাতে আসবে না সে। নীরবেই বিদায় নিচ্ছে।







সে জানে তার জন্য আর কারো চোখের পানি পড়বে না, কষ্টে বুক ফাটবে না। পৃথিবী হতে অনুচ্ছক এক প্রাণ হারিয়ে




যাচ্ছে টুপ করে, নিঃশব্দে।


রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে




রাত দেড়টা।



মিসির আলী সাহেবের কাছে একবার যাওয়া দরকার, বেশকিছুদিন ধরেই যাওয়া হচ্ছেনা।

তবে আজ মনে হচ্ছে যাওয়া যায়।



আসলে ভদ্রলোক বাসা থেকেই বের হন না, কেস নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বেশ কবছর

হলো।

এখন বাড়িতে বসে শুধু পড়াশোনা নিয়ে মত্ত থাকেন, আর আছে চিরসঙ্গী অসুস্থতা।

তবে বাবার ব্যবসা সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত শুভ্র সব ছেড়েছুড়ে আজকাল মিসির আলীর সঙ্গে থাকছে।

ছেলেটা মিসির আলীকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছে ৬ বছর আগে, তবু

পড়াশোনা ছাড়েনি, এক্সপ্রেসো কফি নিয়ে মোহনীয় হাসিটা নিয়ে আজও তাঁকে রাতের

আকাশ দেখতে দেখা যায়। চোখের দেখাই যে সবকিছু নয়, মনের দেখাই যে অনেক

কিছু।

সরল সুন্দর শুভ্রের শুভ্রতা ধুয়েমুছে যাচ্ছিল ব্যবসায়িক জটিলতা, সাংসারিক জটিলতার

চাপে। তবে এখন মিসির আলী মানুষটার জ্ঞানের সঙ্গ পেয়ে শুভ্রর মনে হচ্ছে সে দুনিয়ার

শ্রেষ্ঠ মানুষটার সাথে বসবাস করছে।

“খালা আছো? শূন্য বাড়িটার দিকে এগিয়ে দরজাটায় আনমনে ধাক্কা দিলাম। জানি কেউ

খুলবে না। ঢাকার সব বিষয়সম্পত্তি বিক্রি করে বাদল আর মাজেদা খালাকে নিয়ে খালু

অনেকদিন আগেই পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকা।

সেখানেই করেছেন বাড়ি, ছেলেকে ব্যবসায় নামিয়ে দিয়ে হঠাৎ একদিন চলে গেলেন,

অতিরিক্ত মদ্যপানে স্ট্রোক অস্বাভাবিক কিছু না। বাদল বিয়ে করেছে, ফুটফুটে দুটো

বাচ্চাও আছে। বাদলের কি আমাকে মনে পড়ে?





হয়তো হঠাৎ কোন বিষন্ন বিকেলে একা একা বসে পাগলামি গুলো মনে করে ফিক করে

হেসে দেয়।





বাসায় ভালো রান্না হলে মাজেদা খালা তাঁর হিমুর পথ চেয়ে বসে থাকে,

শতবার মুখ না দেখার প্রতিজ্ঞা করলেও এতিম ছেলেটাকে যে নিজের ছেলে থেকে কম

ভালোবাসতেন না তিনি, আমেরিকায় বসেও একের পর এক পাত্রী দেখে বেড়ান তিনি,

হিমুর তো কোন ঠিক নেই, হয়তো একদিন আমেরিকাই চলে আসলো, এবার ধরেবেধে

বিয়ে দেবেন তিনি। তবে তিনি জানেন না, হিমুরা যে আর কোনদিন ফিরবেনা।





-এই যে হ্যালো, দাড়ান এখানে। এত রাতে বেলা এমনভাবে কোথায় যাচ্ছেন?




– সামনেই যাব, বন্ধুর বাড়ি




– হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে বন্ধুর বাড়ি? রাত দেড়টার সময়? এই মধ্যবয়সে হিমুগিরির সখ

জেগেছে নাকি? ডলা দিয়ে এই পাগলামি ছুটায়া দেব একদম




– স্যার আমিই তো হিমু, আমার হিমুগিরি কিভাবে ছুটাবেন?




– ফাজলামো করেন আমার সাথে? চিনেন আমাকে? শহরের সেরা ক্রিমিনাল আমার নামে

ভয়ে বাথরুমে দৌড়াবে, প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল আছে আমার।




আমার সাথে ফাজলামো করলে কি হয় বুঝতে পারছেন না!

মুচকি হাসলাম মনে মনে, ব্যাজ দেখে চিনে নিয়েছি ধানমন্ডি থানার ওসি আমার সামনে

দাঁড়িয়ে। বেশি বয়স হবে না, পঁয়ত্রিশের মত হবে। বেশ লম্বা, সুপুরুষ উজ্জ্বল শ্যামলা

চেহারা, স্বাস্থ্যবান মানুষ, অমন গোমড়ামুখো না হলে কিছুতেই পুলিশে মানানসই লাগত

না।

একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

এর সাথে বেশি কিছু না বলাই ভালো, আজকালকার পুলিশরা আগের মত

ঢালতলোয়ারবিহীন না, এদের কথার আগে গুলি ছুটে। বলা যায় না, কখন ক্রসফায়ার

করে দেয়।





– স্যার, হলুদ পাঞ্জাবিতে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে নাকি?




– দেখুন আমার তর্কের মুড নাই, বেশি ফাজলেমো করলে ডাইরেক্ট গাড়িতে উঠায়া নিব।




– স্যার কি একা? পুলিশের বড় সাহেবকে একা একা মানায় না তো। যেকোন সময় বিপদ

ধাওয়া করতে পারে।




– আপনারে আমার চিন্তা করতে হবে না, ওয়ার্নিং দিলাম, রাতবিরাতে যেন না দেখি।

– আচ্ছা স্যার, এখন থেকে ইনভিন্সিবল হয়ে যাতায়াত করব। স্যার বেনসন হবে একটা?

উনার অগ্নিদৃষ্টি দেখে আর ঘাঁটালাম না। এগিয়ে গেলাম।




কিছুদূর যেতেই পেছনে চিৎকার

শুনে ঘুরে দেখি, কোন বড় লোকের বাড়ি থেকে পালানো বিদেশি কুকুরের তাড়া খেয়ে

ওসি সাহেব পাগলের মত দৌড়াচ্ছেন, সমস্ত পৌরুষ, গোল্ড মেডেলের হিসেব বোধহয়

ওই কুকুরই নিয়ে ছাড়বে। আর দেখার সময় নেই। আমি হাটা দিলাম।





মিসির আলী সাহেব ঘুমাচ্ছেন। শুভ্র রান্না করছে। বলল,

চাচা এত দেরী হলো যে!

আমাকে চমকানো বেশ কঠিন, তবে শুভ্র আমাকে মুহূর্তে মুহূর্তে চমকায়,

খবর দিইনি। আর এই ছেলে আমার জন্য ভাত বসিয়ে রেখেছে।





– চাচা আমার মনে হচ্ছিল আজ তুমি আসবে। এবং বরাবরের মতই থাকবে না খাওয়া।

তাই রান্নাটা করে ফেললাম। আমি স্যারকে ডাক দিই। তুমিও হাতমুখ ধুয়ে এসো,

একসাথে খাব।





১৯ জুলাই মধ্যরাত।

খোলা আকাশের নিচে একসাথে অনেকগুলো মানুষ এক নন্দন কাননে বসে আছে।

উদ্দেশ্য জোৎস্না দেখার।





গুন্ডা গুন্ডা চেহারার এক লোক, সানগ্লাস পড়া, সমানে দুষ্টুমি করে চলেছে নিলু ভাবীর

সাথে, রফিকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল বটে,

কিন্তু ওই ব্যাটা খালি বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকায় বাকের খুব রাগ করে ওর উপর।

অবশ্য তাঁরও যে মুনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে

হচ্ছে না তা না, কিন্তু মুনা পাথুরে মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যেন কোথাও কেউ

নেই।

নীলু ভাবী এই একটা দিন বেশ খুশি থাকেন, টুনিকে এমনভাবে গলা জড়িয়ে রেখেছেন,

টুনির মনে হচ্ছে দম আটকে যাবে, তবু বড় ভাল লাগছে।




মিসির আলী লোকটাকে বেশ ভালো লাগে শফিকের, লোকটা আলতুফালতু কথা বলে না, এর সাথে

কথা বলতে ভালই লাগে।

মিসির আলীকে পেয়েই আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়েছে শফিক।

পাখিটার গলা টিপে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে শারমিনের, সেই কখন থেকে চিৎকার করছে,

‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’, রফিকের মনটা খারাপ হবে বলে পারছে না।




বাদলকে এই একটা দিনের জন্য ধরে এনেছিল হিমু, বাদল এসেই জুটে পড়েছে হিমুর

সাথে।

দিনগুলির কথা ভোলেনি বাদল, বাদল হারিয়ে যেতে চায় সে দিনগুলিতে, তবে

বাস্তবতাকে অস্বীকার করে নয়।




ওদিকে মাজেদা খালা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন এক ফিরিঙ্গি মেয়ের ছবি,

হিমুকে দেখানোর জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

লক্ষণ খারাপ দেখে বাদলকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে পড়েছে হিমু।

আর শুভ্র মুগ্ধ হয়ে শুনছে সবাইকে।




তাঁরা তিনজন এই মধ্যরাত্রির বনভোজনকে ঘিরে ব্যবসার বুদ্ধি খুঁজছে, মামার মাথায় যতই আইডিয়া

গজাচ্ছে, ভাগ্নেরা যথারীতি ভজকট পাকাচ্ছে। ওদের ধোলাই দিতে খুঁজছে সেই পুলিশ অফিসার।




আরেকটি দিকে দুই আনিস একসাথে বসে আছে।

এক আনিস এই অপার্থিব পরিবেশে

অসাধারণ সব জাদু দেখাতে চাইছে,

আর একজন লিখে ফেলতে চাইছে সবকিছু,

বাচ্চাগুলোর জ্বালায় পারছেনা, মাথায় আসছে না কিছু।

কোথায় যে গেছে এরা কে জানে!

জোৎস্নার অপেক্ষায় আছে দুজনেই।





হালকা হালকা বৃষ্টিও পড়ছে।

আজকের জোৎস্নাটাকে করে দিচ্ছে আলাদা।

এই জোৎস্নায় নিশ্চিতভাবে মিশে আছে এক জোৎস্নাপ্রেমিক,

তারিয়ে তারিয়ে হয়তো উপভোগ করছেন এই মুহূর্তটা।




নুহাশ পল্লীর বড় গাছটার নিচে, বাদল আর আনিসের ছেলেমেয়েদের দেখা গেল।

এক মাঝবয়সী ম্যাজিশিয়ান ভদ্রলোকের পামিং দেখছে।




মাথাভর্তি চুলগুলোর ফাঁকেফাঁকে ঈষৎ পাকা চুল দেখা যাচ্ছে, চোখে সেই চশমা, মুখে

এক চিলতে চিরচেনা হাসি, গায়ে প্রিয় হাফশার্ট আর প্যান্ট।

আনিসের ছেলেটা নিষাদকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বড়ো!

আর থাকা যাবে না!

মায়া বাড়ানো যাবেনা।





ভোর হয়ে আসছে, জাদুকর বিদায় নিচ্ছে, বৃষ্টি পড়ছে।

তাঁর সাথে বৃষ্টির যোগাযোগটা অনন্য।

জাদুকর ছাড়া বাকিরা ছন্নছাড়া।

হয়তো তাঁরা তাই ফিরবেও না আর কোনদিন।







লেখাটি এখানে প্রথম প্রকাশিত হয় - হিমুর দিনরাত্রী



শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০

দৈনন্দিন - ৩

দেখো তোমায় কেমন
সাহস করে লিখছি 
ভাবছি কখন এসে 
দেবে বুঝি বকুনি 
সন্ধ্যারাতের চড়চড় গুঞ্জন 
মৃদু মৃদু কলরবে মুখনি 
অনেক আয়োজন করে
কি যেন বলব 
ভাবছি হয়ত বরাবরে 
আবার ভাট বকছি 
তোমার চোখের গভীরে 
বারবার হারাই
তোমার কথার সুরে 
আমি স্বপ্ন দেখি 
বৃষ্টি নামবে 
সেদিন একছাতায় হাঁটব 
ট্রাফিক সাইক্লোনে 
জর্জরিত নগরী 
কখনো বাড়ি ফিরতে 
হবে মধ্যরাত্রি 
ছোঁব তোমার নিঃশ্বাস 
মুছব তোমার চোখে তৃপ্তি 
ঘুম ভেঙে দেখব 
আসলে আমি একাই সেই
কি যেন কি বলে 
কি যে লিখি 
অজানা ঠিকানায় 
তোমার নামে পাঠাই 
তবু কত কি যেন 
বলা বাকি কে জানে 
হয়তো বলব 
জ্যোৎস্নারাতের উৎসবে


অপ্সরী তুমি কি আমার প্রহর হবে?

অপ্সরী তুমি কি আমার প্রহর হবে? 

তোমার ঠিকানাটা আমার জানা হয়নি,
হয়তো মনটাও।
তবু আমি ভাষা হারাই তোমার চোখে,
আমি গুলিয়ে যাই তোমার কণ্ঠে

কাছে আসার সাধ্যিটাও নেই,
হয়তো গুঁড়িয়ে যাব জীবনের আঘাতে,
তবু একটাবার তোমার প্রিয় হতে চাই

আজও খুঁজে বেড়াই,
মুগ্ধতা নিয়ে ঘুরে বেড়াই,
তোমার শহরের অলিগলি
সরু রাস্তায়, কতশত গোলকধাঁধায়।

জানি
তবু তোমায় পাওয়া হবেনা,
চোখে চোখ রেখে মুগ্ধ হওয়া হলো না
এই শহরেই কিনা হারিয়ে যাই,
কোন গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে,

ক্লান্ত হয়ে শুয়ে শুয়ে গুনব,
অজ্ঞাতবাসের প্রহর,
তবু আমার অকৃত্তিম প্রার্থনার,
শেষ শব্দটিতেও মিশে থেকো তুমি,

অক্লান্ত ছড়িয়ে যেও,
তোমার সুরের হাসিতে আলোয়,
সেই ঝলকেই যে চোখ মুদব আমি,

আমার চোখে তখন থাকুক, 
তোমার প্রিয় হাসি
তখনও হয়তো স্বপ্নে চাইব,
খুব চাইব,

তুমি আসবে,
চোখ গরম করে,
ঠোঁট ফুলিয়ে নেমে আসবে,
ভীষণ শোরগোলে আসবে,
যেমন মরুভূমির রিক্ততা,
সাগর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নেয়

আমি তখন স্বপ্নকুমার,
একগাল হেসে গাইব প্রিয় গানটা,
আমি তোমার চোখের কালো চাই

তুমি কি সেদিন তাকাবে আমায়
কাঁপা কাঁপা হাতটা ধরে বলবে
রাস্তাটা না শেষ হোক
নাকি মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে

অপ্সরী তুমি কি আমার প্রহর হবে? 


শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০

অবলোকন - ২

শুনেছো কি তুমি,

আমি সর্বপ্রাণে,

করেছি শিখর আরোহন,

তাই সময় আমায় করছে নির্বাক।।

অগ্নির অহংকার চিরায়ত শুদ্ধতার,

আজ ভঙ্গুরসম,

অশুভ হাতিয়ার বনেছে বলে,

তোমার ক্ষীণ নিনাদে জানি আগুন ছিল,

প্রতিবাদের শুভ্র আগুন,

সে আগুন নিভেনা শত যন্ত্রণারও তোপে।


তোমার দগ্ধ শরীরে,

আমি অস্ফুট কান্না শুনতে পাই,

ঐ পিশাচের রুদ্রমূর্তিতে,

শিষ্ট আজ কোনঠাসা পড়ে রয়,

শুদ্ধতা আজ অস্তিত্বের খোঁজ করে।


সত্য এখন তাই,

দূরে দূরে মুখ লুকায়,

অসহায় বিজিতরূপে,

নিস্তেজ অদম্য ক্ষোভে,

ফিরবেনা সহসা জেনো,

তোমাদের এই প্রহসনের নগরীতে,

মিথ্যের রাজত্বের অপমানে,

তুচ্ছার্থের অভিমানে।



তবু তুমি বেঁচে থাকবে,

যতদিন হাতের ওই মশালটা জ্বলবে,

এবং তুমি বেঁচে থাকবে,

প্রতিবাদের আবাহনে,

তুমি বেঁচে থাকবেই,

তেজদীপ্ত আলো হয়ে,

হ্যাঁ তুমি বেঁচে থাকবেই,

এই ধরণীর ধারক হয়েই,

সত্য,

তুমি বেঁচে থাকবেই,

প্রতিরোধে সাহসের বাঁধ হয়ে৷ 



শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০

অবলোকন -১



মুখোমুখি কখনো হবনা তোমার,




স্পর্শটাও হয়ত পাব না তোমার,




তবুও আমার প্রিয় রাজপথে,







চারচাকার অনর্গল আর্তনাদের ভীড়ে,







আনমনেই একটা ছায়াদৃশ্য ভাসে,




একটা হাতটা এসে আমায় থমকে দেয়,



মৃদু পরশে প্রিয় তুমি গন্ধটা বাতাসে ভেসে যায়,




কোথা থেকে যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে,



একটা মিষ্টি সুর ,



সেই সুরে আমি চমকে উঠি,



তুমি শব্দটা শুনে,



ঝমঝম এক আলোড়নে হৃদকম্পন বাড়ে,


একটা হাসি যেন আকাশবাতাস কাঁপিয়ে নিচ্ছে,



সে হাসিতেও তুমি গন্ধটা ভেসে আসছে,


আমি কানপাতি


ছমছম আওয়াজের আশায়,


কিন্তু সে আড়ি নিল কোন অভিমানে,


চোখ খুঁজে কাঙখিত অবয়বে,


চোখে চোখ রেখে মন খোলার তাগিদে,



সিগন্যাল ছেড়ে দিল,


গাড়ি চলতে শুরু করল,


তুমি গন্ধটা উড়ে যাচ্ছে


উড়ছে আমি মানুষটাও


নিশ্চুপ বিদায়

নিশ্চুপ বিদায় খানিকটা বাংলা খানিকটা বিহারী আর খানিকটা হিন্দি ভাষা মেশানো চিৎকারটা শুনতে পাচ্ছি মোড়ের শেষমাথার বাড়িটার সামনে থেকে। চিৎকারের ...