হে
গর্বিত বাঙালী সন্তান,
বিজয়ের
অভিনন্দন তোমায়।মুক্তির আনন্দে ভাসাও তোমার মন,
মন ভরে গাও বিজয়ের গান
মন ভরে নিঃশ্বাস নাও এ পবিত্র বাতাসে,
শুস্বাগতম তোমায় রক্তে অর্জিত পুণ্যভুমিতে,
আলতারাঙা নির্বাক দুঃখিনি মাটিতে তোমাকে স্বাগতম।।
দেখো সাহসিকা বাঙালি দেখো,
এ মাটি কতশত বিদ্রোহের সাক্ষী,
কত ইতিহাস বয়ে বেরাচ্ছে এ মাটি,
হাসিকান্নায় মেশা শত আবেগ আর চোয়াল ভাঙা প্রতিজ্ঞা দেখেছে এ মাটি,
উল্লসিত রক্তপিপাসু হায়নাকে নিরবে ঘৃণা দেখিয়েছে এ মাটি,
এ মাটির কথা শুনবে কে,
মাটির যে ভাষা নেই।।
মৃত সন্তানকে বুকে নিয়ে করা মাতৃভূমির নিরব আর্তনাদ যারা হৃদয়ে ধারণ করেছিল,
সেই মরণতুচ্ছ করা দুরন্ত বিচ্ছুগুলোই দিয়েছে তোমায় বিজয়!
এ দিনটা তাই শুধুই তোমার,
তোমাকে অভিনন্দন বীর বাঙালি যুবক।।
জানো কি প্রিয়,
এ মাটি লক্ষকোটি উদগ্রিম মানুষগুলোকে বুকে নিয়ে শুনেছিল সেই বজ্রকন্ঠ,
"এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম",
এই মাটিও উদ্বোলিত হয়েছিল মুক্তির আনন্দে,
বজ্রকন্ঠের মানুষটিকে বড় আপন মনে হয় তাঁর,
কিন্তু তাঁর কিসের মুক্তি?
মাটি তো চিরমুক্ত!
সে কেনইবা মুক্তির আকাংখায় নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে?
আসলে নিজ সন্তানের রক্তে প্রতিনিয়ত স্নান কারইবা ভাল লাগে,
সন্তানের মুক্তি যে তাঁর মুক্তি,
তাই সে অধির আবেগে বজ্রকন্ঠের মানুষটার কাছে কামনা করেছে মুক্তি!
এ কামনা যে কেউ বোঝেনি,
মাটির যে ভাষা নেই।।
বুঝেছিল!
কেউ বুঝেছিল,
ভাষা দিয়ে নয়,
মহামানব হৃদয় দিয়ে শুনেছিল মাতৃসম মাতৃভূমির বার্তা,
তাই নিজের জীবন উৎসর্গ করে হানাদারের দুর্গে প্রবেশের আগে সেই সাহসী দিয়েছিল স্বাধীনতার ডাক।।
মাটির আর্তনাদ তখন থামেনি,
হানাদার যে তাঁর দেহকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে,
সন্তানদের একের পর এক মরণ চিৎকারে আৎকে উঠেছে বারবার!
সে অনুনয় করতে থাকে পিশাচদের,
"থামো থামো!
থামো তোমরা!
তোমরা তো আমারই সন্তান,
এরা তো তোমাদেরই ভাই,তবে কেন এমন করছো?
কি অপরাধ আমার?
আমার সন্তানের রক্তে আমাকে মাখিয়ে কেনো আমাকে কলংকিত করছো?
আর মেরোনা আমার সন্তানদের,
আমার যে কস্ট হয়"
শোনেনি পিশাচরা মাটির আহাজারি,
খুবলে খুবলে হত্যার এক নেশায় মেতেছে তারা,
মাটি বারংবার রক্তে রাঙা হয়,
তার আর্তনাদ অব্যক্ত থেকে যায়,
মাটির যে ভাষা নেই।।
কিন্তু তাঁর সন্তানরা জেগে উঠেছে,
তারা বুঝে গেছে এই পিশাচ হতে তাদের মুক্তি নেই।।
এ মাটির সবচেয়ে প্রিয় সন্তানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে,
শত্রু বধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তাজা চঞ্চল প্রাণগুলো একে একে ঘর ছেড়ে বেরুতে থাকে।।
তাঁকে প্রত্যেকেই কথা দিয়ে যায়,
"দুঃখিনী মাতৃভূমি, ভেবনা,তোমাকে মুক্ত করেই ফিরবো আমরা",
নিরবে আর্শীবাদ করে মাটি,
আর অজানা আশংকা নিয়ে সন্তানদের ফেরার অপেক্ষা করে,
কেউ ফেরে কেউ ফেরে না,
খুজে না পেয়ে একা একা নিদারুন কস্ট পায় মাটি,
মাটির যে ভাষা নেই।।
মাটির বিশ্রাম নেই,
কিন্তু তাঁর মমতাধারী কন্যাদের ইজ্জত হারানোর চিৎকারে কাঁদতে কাঁদতে সে আজ ক্লান্ত।।
সেও আজমুক্তি চায়!
তার মেয়েদের বিবস্ত্র করে তাঁরই বুকে অকত্থ্য নির্যাতন তাঁর আর সহ্য হচ্ছেনা!
তাঁর নিজেকেই যে আজ বিবস্ত্র লাগছে!
পিশাচরা কি ভুলে গেছে যে শরীরগুলোকে নিংড়ে নিচ্ছে,
তাঁর স্বপ্ন গুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করছে,
বুনে দিচ্ছে পিশাচি বীজ,
সে রকমই এক নারী শরীর থেকেই তাঁর জন্ম?
মাটি চিৎকার করে বিদ্রোহ করে,
নিরবে মুখ লুকিয়ে তাঁর আদরের মায়েদের কাছে ক্ষমা চায় এই পশুগুলোকে জন্ম দেয়ায় জন্য।।
একটা মুদ্রার দুটো পিঠ থাকে,
একপিঠে মাটি পায় সন্তান হারানোর প্রচন্ড যন্ত্রণা,
আরেকপিঠে দামাল ছেলেগুলোর দৈত্যবধ করে মুক্তকরে এগিয়ে যাওয়া দেখে হিংস্র আনন্দ লাভ করে,
নিরবে দিয়ে বলে যায়,
শাবাশ এগিয়ে যা!
পিশাচ দল বারবার পিছিয়ে আসে প্রবল প্রতিরোধের সামনে,
আরে আসবেই তো!
রক্ত যারা দিতে শিখে গেছে তাঁদের আটকানো কার সাধ্যি!
পিশাচ দল বুঝতে পারে তাদের দিন ফুরিয়ে আসছে,
এবার তারা নজর দিলো মাটির সেরা মেধাবীদের দিকে,
শোকে বিহ্বল দেশটাকে এবার খোঁড়া করে দিতে তাঁরা নতুন নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে।।
আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
কয়েক দশক আগে এই শুভদিনেই রচিত হয় মুক্তিসনদ!
শত যোদ্ধার সাথে বিজয়ে উচ্ছোসিত হয় আঘাতে জর্জরিত মাটি,
মাটির কান্না তবু থামেনা,
তার বীর সন্তানরা যে চিরনিরব হয়ে গেছে তার বুকে!
তার বুক যে আজ বিরান শ্মশানভূমি,
তার মেয়েরা যে সম্ভ্রমহানির অপমানে গণহুতি দিয়েছে সে কান্না কি শতাব্দীতেও ফুরোবার?
তবু মাটি আশায় বুক বাঁধে,
তার সন্তানরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে,
তোমাকে স্বাগতম এ কোমল মাটির বুকে ....!